এম বশর চৌধুরী, উখিয়া:
কক্সবাজারের উখিয়ার নির্ভিক শিক্ষাবিদ আলহাজ্ব মৌলভী আব্দুস ছালাম। অত্যন্ত ধর্মভীরু ও সকলের শ্রদ্ধেয় এ মহান শিক্ষককে আব্দুস ছালাম স্যার নামে সবাই চেনে। তার পিতার নাম আলহাজ আশরফ আলী মাষ্টার, মাতা- মাজুমা খাতুন। ১৯৪৮ সালের ১ জানুয়ারী রাজাপালং আলীমোরা গ্রামে সমভ্রান্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। এ শিক্ষকের পূর্ব পুরুষের আদিনিবাস চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া থানাধীন আমিরাবাদ গ্রামে। ব্রিটিশ শামনামলে ব্রিটিশ সরকার থেকে জমিদারী গ্রহন করে মোঃ বকশু চৌধুরী ২ সন্তান সহ রাজাপালং এলাকায় চলে আসেন। তৎমধ্যে একজন মকবুল আলী চৌধুরী ও অপর জন মতিউর রহমান চৌধুরী। মকবুল আলী চৌধুরী ছিলেন আব্দুস ছালামের দাদা। তৎসময়ে শিক্ষা দীক্ষায় পিছিয়ে থাকা গ্রামের শিক্ষার আলোক বর্তিকা প্রজ্জলন করে গেছেন আলহাজ্ব আশরফ আলী মাষ্টার। পরবর্তীতে পিতার আদর্শ বুকে লালন করে আলহাজ্ব মৌলভী আব্দুস ছালাম জীবনের দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেছেন মহান শিক্ষকতায়।
তিনি ছাত্রদের পাঠদানকালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক এ.কে ফজলুল হকের ভাষায় প্রায় সময় বলতেন ‘শুধু বইয়ের কীট হয়ে যে ছাত্রজীবন কাটাতে চাই- আমি তাকে চাইনা, আমি চাই সে ছাত্র যে হবে নিষ্টাবান, সৎচরিত্র, সাহসী আর প্রকৃত শক্তিশালী। শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার দিক নির্দেশনা আত্ম মর্যাদাবোধ আছে প্রখর। আব্দুস ছালাম স্যারের মহান এ শিক্ষার আর্দশ বুকে লালন করে অনেক শিক্ষার্থী বদলে দিয়েছে জীবনের গতিপথ। তার শিক্ষার্থীর মধ্যে গোলাম মোর্শেদ দুলাল বাংলাদেশ সচিবালয়ে কর্মরত। এ ছাড়াও তার ছাত্রদের মধ্যে ব্রিগেডিয়ার শামীম ওয়াহীদ, ম্যাজিষ্টেট্র রফিক, উপজেলা চেয়ারম্যান সরওয়ার জাহান চৌধুরী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী, ওসি মফিজ উদ্দিন, ওসি তদন্ত মোঃ আইযুব, ডাঃ জাবেদ জাহাঙ্গীর তুহিন, ডাঃ আলী হোছাইন সুমন, দৈনিক আলোকিত উখিয়ার সম্পাদক মিজান উর রশিদ মিজান, ঢাকা ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির ফিজিক্স বিভাগের প্রধান মামুনুর রশিদ মামুন, সাংবাদিক এম বশর চৌধুরী, মাষ্টার আবুল কালাম, কাজী হেলাল, কাজী রফিক, রাজাপালং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক খোরশেদ আলম, হরিণমারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আতাহার হোছাইন মাশুক সহ অসংখ্য ছাত্র আছে। যারা বর্তমানে রাষ্ট্র ও সমাজ পরিবর্তনের কর্নধার হিসাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি এ প্রতিবেদক শিক্ষক আব্দুস ছালামের সাথে একান্ত আলাপ চারিতায় বলেন, ১৯৫৩ ইং সালে রাজাপালং মাদ্রসার অধীনে রাজাপালং প্রী- পাইমারী স্কুলে ভর্তি হয়ে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। ১৯৬০ ইং সালে রাজাপালং এম.ইউ ফাজিল মাদ্রসা থেকে দাখিল, ১৯৬৪ সালে আলিম এবং ১৯৬৬ ইং সালে ফাজিল পাস করেন। তিনি ১৯৭১-১৯৭২ ইং সালে সিএনএড পাস করেন। ইহা ছাড়াও তিনি মহেশখালী কউমী মাদ্রসায় ১বছর অধ্যয়ন করেন। ১৯৬৬ ইং সালে উত্তর পুকুরিয়া এইড এইড প্রাইমীরা স্কুলে মাসিক ৩০ টাকা.বেতনে চাকুরী জীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে মরহুম মাওলানা মোঃ এয়াছ (রঃ) এর নির্দেশে ১৯৬৭ ইং সালে রাজাপালং এম.ইউ ফাজিল মাদ্রসায় শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন মাসিক ৬০ টাকা.বেতনে। ১৯৬৯ সালের কিছু সময় পর্যন্ত সেখানে শিক্ষকতা করেন। ১৯৬৯ সালে প্যানেল পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৬৯ সালের ৮ মার্চ উখিয়া মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। উক্ত স্কুল ১৯৭৩ ইং সালে সরকারী হয়। একাধারে ২১ বছর ৮ মাস ১১ দিন এ স্কুলে চাকুরী করা কালে তৎকালীন উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মরহুম নুরুল ইসলাম চৌধুরী প্রঃ ঠান্ডা মিয়ার অনুরোধে ১৯৯০ ইং সালের দিকে শিক্ষা দিক্ষায় পিছিয়ে থাকা বালুখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলী হন। সেখানে ৬ মাস শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে একই বছর জুলাই মাসের ১ম দিকে রাজাপালং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলী হয়ে শিক্ষকতা করেন। ১৯৯১ সালের জুলাই মাসে রাজাপালং মাদ্রসায় হতে উখিয়া মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পুনরায় বদলী হন। এ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করা কালে ১৯৯৬ ইং সালে মাঠের মধ্যবর্তী স্থানে সাইক্লোন সেল্টার নির্মানের স্থান নির্ধারন নিয়ে তৎকালীন উখিয়া টেকনাফ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর সাথে মতবিরোধ হলে তাকে পাতাবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলী করা হয়। ২০০১ সালে পুনরায় উখিয়া মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলী হন। উখিয়া মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত থাকা কালে ২০০৬ ইং সালের জানুয়ারীতে অবসর গ্রহন করেন এবং ২০০৭ সালে পবিত্র হজ্বব্রত পালন করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি বিনা বেতনে কামারিয়ার বিল জামে মসজিদ, সিকদার বিল এয়াকুব আলী জামে মসজিদ, উখিয়া ষ্টেশন জামে মসজিদে খতিব এবং উখিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে প্রতিদিন আছরের নামাজের পর কোর আন তালিম প্রদান করতেন।
বর্তমানে তিনি বাড়ীর কাজ তদারক করেন। জামতলী জামে মসজিদে মাগরিব নামাজের পর ধর্মীয় তালিম এবং শুক্রবার দক্ষিন পুকুরিয়া হুসাইনিয়া জামে মসজিদে খতিব হিসাবে বিনা বেতনে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একই মাদ্রসায় কমিটির সভাপতি। কর্মজীবনে তিনি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্টান, মকতব ও ধর্মীয় প্রতিষ্টান প্রতিষ্টার ক্ষেত্রে অগ্রনী ভুমিকা পালন করেন। কথা প্রসঙ্গে শিক্ষক আব্দুস ছালাম আরো বলেন, তাহার ব্যাপক আকাংখা আরেকবার পবিত্র হজ্ব অথবা উমরা পালন করার। শিক্ষক আব্দুস ছালাম ১৯৬৯ সালের শেষের দিকে দক্ষিন পুকুরিয়া গ্রামের মরহুম অছিয়র রহমান সওদাগরের মেয়ে নুর আয়েশা বেগম কে বিবাহ করেন। ২০০১ সালে ১ম স্ত্রী মারা যান। পরবর্তীতে রাজাপালং উত্তর পুকুরিয়া গ্রামের ছৈয়দ আকবর খলিবার মেয়ে আয়েশা বেগম এর সাথে বিয়ে হয়। ১ম স্ত্রীর সংসারে ২ ছেলে ও ৩ মেয়ে। তৎমধ্যে মেয়ে আয়েশা বেগম শিক্ষতা করেন রাজাপালং বালিকা মাদ্রসায়। ছেলেদের মধ্যে হাবিবুর রহমান সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে কর্মরত এবং নজরুল ইসলাম কক্সবাজার শহরে ব্যবসা করেন। ২য় স্ত্রীর সংসারে মোঃ আরফাতুল ইসলাম নামে একজন সন্তান আছে। শিক্ষক আব্দুস ছালাম ডিজিটাল যুগের সাথে তাল মিলিয়ে মোবাইল- ০১৮২৫-৭১০৫৪৩ ব্যবহার করেন। তিনি আলোকিত উখিয়া পরিবারকে ধন্যবাদ জানিয়ে সকলের মঙ্গল কামনা করেন।
পাঠকের মতামত